Categories
আমাদের সম্পর্কে

দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার গা ঘেঁসে ইছামতি নদী। নদীটি পার হলেই ভারতের বসিরহাট। ৪৭-এর উপমহাদেশ ভাগের সময় আইয়ুব আলী র বসতি ও আত্মীয়স্বজন সাতক্ষীরা-বসিরহাট দু’জেলায় ভাগ হয়ে যায়। শৈশব থেকে যৌবন ও বেড়ে ওঠা বর্তমান সিমান্তবর্তী এ অঞ্চলকে ঘিরেই। দুই বঙ্গ ভাগ হলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক ভাগ হতে পারেনি। সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব বেশী জোরদার না হওয়ায়, যখন তখন নদী পার হয়ে যাওয়া যেত এপার থেকে ওপারে। 

শুরুটা স্কুল জীবনে। মৌ চাষের উপর প্রশিক্ষণ হবে জানতে পেরে দুই বন্ধুর আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া। মৌমাছি বা মধু শিল্প তখন এতটা উন্নত না। দরিদ্র পরিবারের কাছে কর্ম জীবন মৌমাছির সাথে কাটানো নিতান্তই ভাগ্য পরীক্ষা‌ ছাড়া আর কিছুই না। নিজের ২ টি ও ভাড়া করা ১০ টি, মোটমাট মাত্র ১২ টি সেরেনা মৌ বক্স নিয়ে মধুর জগতে পদার্পণ। উপার্জনের তাগিদে পাশাপাশি দর্জি হিসাবে কর্ম জীবন পরিচালনা করতে হয়েছিল আইয়ুব আলী র।

সালটা ১৯৮৮ , শোনা গেল ভারতের কাশ্মিরে এক প্রজাতির মৌমাছির চাষ হয় যারা বেশি মধু আহরণ করতে পারে। এলাকার ‘কেনা’ নামক দোকানদার থেকে ১০ হাজার টাকা ধার নিয়ে কাশ্মীর রওনা হলেন আইয়ুব আলী। ৬ টি মৌ বক্স নিয়ে ফিরলেন পশ্চিমবঙ্গে। প্রথম বছরেই সফলতা, ৬ টি মৌ-বক্স বেড়ে হলো ৩১ টি বক্স। তখন‌ থেকে ভারতের নদীয়ায় সরিষার মধু , মুর্শিদাবাদ ও মালদহে লিচুর মধু এবং সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করতে শুরু করেন আইয়ুব আলী। 

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে আইয়ুব আলী প্রথম নিয়ে আসেন এপিস মেলিফেরা প্রজাতির মৌমাছি। তখন ‘বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন – বিসিক’ শুধুমাত্র সেরেনা প্রজাতির মৌমাছির প্রশিক্ষণ দিত। ১৯৯৩ সালে বিসিকের কর্মকর্তা অলিউর রহমান সাতক্ষীরায় আইয়ুব আলী থেকে কিছু সংখ্যক মেলিভেরা মৌ-বক্স নিয়ে ঢাকায় প্রেরণ করেন। তারপর মেলিভেরা নিয়ে বাংলাদেশে অফিসিয়ালি কার্যক্রম শুরু করে বিসিক। আইয়ুব আলী তখন নিজের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিসিকের যাত্রাবাড়ি ও বাগেরহাট শাখায় প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এছাড়াও বিআইএ-এর সাথেও প্রশিক্ষক  হিসাবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। এভাবেই ধিরে ধিরে মেলিভেরা মৌমাছি চাষের মাধ্যমে বিশাল এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসল এ দেশে, যা এখন সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান। 

আইয়ুব আলী র ব্যবসা সম্প্রসারণের সময়ে, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশে ‘শেফা মধু’ নামে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দাড় করান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তাঁর সন্তান ব্যবসার দায়িত্ব নিলে , মৌমাছি ও মধু ইন্ডাস্ট্রিতে পিতার অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় রাখতে তাঁর নামানুসারে প্রতিষ্ঠানের পূনঃনামকরণ করেন – ‘ম্যাগ’ । যার পূর্ণরূপ ( MAAG ) M– Mohammad, A– Ayub, A– Ali, G– Gazi তথা Muhammad Ayub Ali Gazi.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Calendar

December 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Categories