এক ফোটা মধু !
রাত ১০ঃ৩০ বাজে।
সবসময়ের মতো এইবারেও বাবার হাতে একটি প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। নীল রঙের প্যাকেট। ভিতরে কি আছে বোঝা যাচ্ছে না৷ দরজা বন্ধ করতে করতে বাবা আমার হাতে প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।
আমি বললাম, “কি আছে ভিতরে?”
বাবা বললো, “ফুলের রেণু।”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
বললাম, “ফুলের রেণু মানে?”
বাবা কিছু বললো না। মুচকি হাসলো। এরপর হাতমুখ ধুতে চলে গেলো। আমি প্যাকেটটি খুললাম। এতো দেখি মধু। এবার বুঝলাম ফুলের রেণু কি! মনে মনে হেসে ফেললাম। এবার চামচ নেওয়ার পালা। মধু খেতে আমি উদগ্রীব। চামচটি মধুতে পূর্ণ করে ফেললাম। এবার মুখে দিলাম। মধু খেতে খেতেই কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেছি। আরেহ আমি নিজেই যে মৌমাছি। আমার মৌমাছি বন্ধুরাও আছে। সূর্যমুখী ফুলের উপর আমি বসে আছি। আমার চারপাশে আরো অনেক ফুল আছে। আমি উড়তেও পারি। আমার ডানা আছে। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে যেতে পারি। আহা কি আনন্দ! হঠাৎ একটি মৌমাছি এসে বললো, “শুধু ঘুরে বেড়ালে চলবে না। ফুল থেকে রেণু নিয়ে জমা করতে হবে।”
আমি বললাম, “এটা কোনো ব্যাপার নাকি।”
কিন্তু যতটা সহজ ভেবেছিলাম ততটা সহজ নয়। এক ফুল থেকে রেণু নিয়ে অন্য ফুল গুলোতে যাওয়া। আবার সেখান থেকে রেণু নিয়ে মৌচাকে মধু জমা করা৷ এতো অনেক কঠিন ব্যাপার। কিন্তু না আমাকে করতেই হবে। অনেক গুলো ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করলাম। ফুল গুলোতে ঘুরতে ঘুরতে প্রায় ৮০ কিলোমিটার অতিক্রম করে ফেলেছি। অন্য মৌমাছিদের সাথে গল্প করতে করতে গেলাম মৌচাকে। এরপর মৌচাকে মধু জমা করলাম। এভাবেই দিন গেলো। দিন শেষে দেখা গেলো আমি মাত্র এক ফোটা মধু জমা করেছি মৌচাকে। আমার অন্যান্য মৌমাছি বন্ধুদেরও একই অবস্থা। আজ বুঝলাম ১ ফোটা মধু জমা করা এতো কঠিন। তবে আমাদের বন্ধুদের সংখ্যা অনেক। তাই, শেষে দেখা গেলো সব মিলিয়ে অনেকটুকু মধুই মৌচাকে জমা হয়েছে। যাই হোক ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল সকালে আবার মধু জমা করার কাজে লেগে পড়তে হবে। সকালে দেখি কয়েকজন লোক এসেছে। জমাকৃত মধু গুলো এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় নিয়ে গেলো। শুনেছি মধু মানুষের জন্য খুবই উপকারী। এটি তাদের সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ আর স্বাদ তো আছেই। সব দিক দিয়েই গুণে পরিপূর্ণ আমাদের এই মধু। মনে মনে বললাম, “যাক বাবা ভালোই লাগছে। অন্যের উপকার করলেও মনের ভিতরে এক আনন্দ পাওয়া যায়।”
মধু খেয়েছিস?
কি? কি?
মধু খেয়েছিস তুই?
আরেহ, বাবা তুমি! আমার ডানা কোথায়?
কিসের ডানা?
ও আচ্ছা, আমি এতোক্ষণ মৌমাছির রাজ্যে হারিয়ে গেছিলাম। আজ বুঝলাম এক ফোটা মধু তৈরি করতে মৌমাছিদের কতো কষ্ট করতে হয়।